পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৩

গ্রীক পূরাণের স্ফিংস!! (পর্ব-১)

একটি পৌরাণিক ঘটনা দিয়ে শুরু করা যাক।গ্রীক পুরাণের থিবস্ নগরীর নাম হ্য়ত অনেকেই শুনে থাকবেন।তো এই থিবস্ এর নবম সম্রাট লেয়্যাস এর পূত্র ছিলো ইডিপাস। অনেক দিন নিঃসন্তান থাকার কারনে একদিন সম্রাট লেয়্যাস তার সম্রাজ্ঞী জ্যাকোস্টাকে নিয়ে ডেল্ফি রাজ্যের একজন পুরোহিতের সাথে দেখা করতে যান। পুরোহিত জ্যাকোস্টাকে বলেন ''যদি তোমার কোন পূত্র সন্তান হয়, তাহলে সে তার পিতাকে হত্যা করে তোমাকেই একদিন বিয়ে করবে'' কিন্তু তার কিছুদিন পরেই জ্যাকোস্টার একটি পূত্র সন্তান হয়। পুরোহিতের ভবিষ্যত বানী যেন সত্যি না হতে পারে সে জন্য রাজা লেয়্যাস ইডিপাসকে একজন সৈন্যের হাতে তুলে দিয়ে তাকে পাহার থেকে ফেলে দিতে বলে। কিন্তু সৈন্য তাকে পাহার থেকে ফেলে না দিয়ে ক্রোরিন্থ রাজ্য থেকে আসা এক মেষ পালকের হাতে তুলে দেয়। এভাবে একদিন শিশুটি ক্রোরিন্থের রাণী মেরোফের কাছে চলে যায়। তার কোন সন্তান না থাকায় তিনি শিশুটিকে বড় করে তোলেন।

তারও অনেক বছর পরে ইডিপাস একদিন এক মাতালের কাছে জানতে পারে মেরোফ তার আসল মা না। সে কথার সত্যতা যাচাই করার জন্য ইডিপাস সেই একই পুরোহিতের কাছে যায়। পুরোহিত তাকে তার আসল বাবা-মার পরিচয় না জানালেও সেই ভবিষ্যত বানীটা জানিয়ে দেয়। পুরোহিতের ভবিষ্যতবানী যেন সত্য না হতে পারে তাই ইডিপাস আর ক্রোরিন্থে ফিরে না গিয়ে ডেল্ফির কাছের থিবস্ রাজ্যের দিকে যাত্রা করে।
যাত্রা পথে সে একটি তিনরাস্তার সন্ধিতে এসে দাড়ায়, যেখানে সে একটি ঘোড়ার গাড়ি দেখতে পায় যেটা ছিলো তার আসল পিতা রাজা লেয়্যাসের গাড়ি। কিন্তু আগে যাওয়ার জন্য তাদের মধ্যে ঝগড়া লেগে গেলে নিজেকে রক্ষা করতে গিয়ে রাজা লেয়্যাসকে মেরে ফেলে, যেটার কারনে ভবিষ্যত বানীর অর্ধেক পূরণ হয়ে যায়। সেখান থেকে রাজার একটি সৈন্য রাজার মৃত্যু সংবাদ নিয়ে ফিরে যেতে পারে।

আরো কিছু পথ সামনে এগিয়ে গেলে ইডিপাস একটি স্ফিংস এর মুখোমুখি হয়। স্ফিংস ছিলেন প্রাচীন গ্রিসের থিব্স নগরীর রক্ষক। নগরীতে প্রবেশকারী আগন্তুককে ধাঁধার জটিল জালে বন্দি করার কৌশল ছিল স্ফিংসের একচেটিয়া রণনীতি। সেইসব কূট প্রশ্নের উত্তর জানা ছিল না কোনও মানুষের। ধাঁধার সমাধান না করতে পারলে থিব্স-এ প্রবেশ করা তো যেতই না, উপরন্তু খোয়া যেত প্রাণটাও। উত্তর দিতে অপারগ সেইসব হতভাগ্য মানুষকে বধ করে উদরপূর্তি হত স্ফিংসের। একমাত্র ব্যতিক্রম ইডিপাস। স্ফিংস এই গ্রিক বীরকে প্রশ্ন করেন: ‘কোন সেই জন্তু যে সকালে চতুষ্পদ, মধ্যাহ্নে দ্বি-পদ আর সন্ধ্যায় তিন পদের সাহায্যে চলে?’
প্রত্যুত্তরে ইডিপাস জানান, তার নাম মানুষ। শৈশবে সে চার হাত-পায়ের সাহায্যে হামাগুড়ি দেয়, যৌবনে দু’পায়ের ওপর ঋজু হয়ে চলে আবার বার্ধ্যক্যে হাতের লাঠির ওপর ভর করে হাটে। কথিত আছে, এই উত্তর শোনার পরই ধ্বংস হয়ে যায় স্ফিংস ও তার সঙ্গের বিভীষিকা।

আসুন জানা যাক কি এই স্ফিংস!! যুগে যুগে পৌরাণিক ইতিহাসের নানা কাহিনীতে আমরা অনেক দেবতার সন্ধান পাই। আবার এ নিয়ে রাক্ষস আর দানব-দানবীর ইতিহাসও নেহাতই কম নয়। স্ফিংস তেমনি এক পৌরাণিক দানবী। প্রাচীন মিসর এবং গ্রিক পুরাণ থেকে এর উদ্ভব। পৌরাণিক বর্ণনা অনুযায়ী স্ফিংস হচ্ছে একটি সিংহ, যার মাথা মানবীর। এর ব্যতিক্রম বর্ণনাও রয়েছে কোথাও কোথাও। তবে মূল বক্তব্য এটিই। এখনো প্রাচীন বিভিন্ন নিদর্শনে এই দানবীর অস্তিত্বের প্রমাণ মিলে।

1 টি মন্তব্য:

  1. গ্রীক পুরাণের এমন কাহিনি শুনে বর্তমান বাস্তবতার সাথে এর কোন মিল পাওয়া যায় না। তবে পড়তে ভালো লাগে এবং ভালো লাগে এই উপমা গুলো ব্যবহার করতে।

    উত্তরমুছুন