পৃষ্ঠাসমূহ

বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৩

গ্রীক পূরাণের স্ফিংস!! (পর্ব-২)

মিসরের বিখ্যাত পিরামিড গ্রেট স্ফিংসের নাম শোনেনি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মানুষের মাথা আর সিংহের শরীরের আদলে গড়া এই পিরামিড বিশ্বের বিস্ময় জাগানিয়া স্থাপত্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর বৃহত্তম ও বিখ্যাত স্ফিংস ভাস্কর্য মিসরের নীলনদের তীরে গিজা মালভূমিতে অবস্থিত। মনে করা হয়, সে স্ফিংসের চেহারা রাজা ফারাহ খাফরা অথবা সম্ভবত তার ছেলের।মিশরীয় প্রাচীন ইতিহাসে একাধিক স্ফিংসের উল্লেখ পাওয়া যায়। এরা প্রধানত মিন্দর রক্ষক ছিলেন। তবে শুধু মিন্দরই নয়, পিরামিড, অর্থাৎ রাজকীয় সমাধির দ্বার-প্রান্তেও স্ফিংসের উপিস্থতি ছিল। ঐতিহাসিক মিশরীয় চিওস্ নগরের প্রতীক ছিলেন স্ফিংস। সে যুগের বহু সিলমোহর ও মুদ্রার পিঠেও খোদাই করা থাকত স্ফিংসের অবয়ব।

গ্রীক পুরাণে কথিত আছে স্ফিংস উঁচু থেকে পাথরে আছড়ে পড়ে মারা যায়। আবার অন্য কাহিনী মতে, সে নিজেই নিজেকে খেয়ে ফেলে। ভয়ঙ্কর এ দানবীর নাম স্ফিংস। যার শরীরের মাথার দিকটা মানবীর মতো আর শরীরের বাকি অংশ সিংহের মতো। তবে এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকে আবার একে মতভেদ না বলে প্রকারভেদ বলার পক্ষপাতী। নানা পৌরাণিক কাহিনী ঘেঁটে দানবী স্ফিংসের তিনটি নাম এবং চেহারা খুঁজে পাওয়া যায়। এগুলো হচ্ছে 'অ্যান্ড্রোস্ফিংস' (Androsphinx)। এ ধরনের স্ফিংসের দেহ সিংহের, মাথা মানবীর। অধিকাংশ বর্ণনায় এ ধরনের স্ফিংসের কথাই জানা গেছে। আরেকটি হচ্ছে ক্রায়োস্ফিংস (Criosphinx)। এ ধরনের স্ফিংসের দেহ সিংহের, মাথা ভেড়ার। শেষটি হচ্ছে হেইরোকোস্ফিংস (Hierocosphinx)। যেটির দেহ সিংহের আর মাথাটি হচ্ছে বাজপাখির। স্ফিংস শব্দটি মূলত গ্রিক ক্রিয়াপদ ‘স্ফিংগো’ থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ শ্বাসরোধ করে হত্যা করা। লক্ষ্যণীয় এই যে স্বয়ং পশুরাজদের শিকার ধরার প্রক্রিয়াও ঠিক এমনই। সিংহ শৌর্যের প্রতীক। তাই মানবদেহের সঙ্গে তার গঠনের মিশেল ঘটিয়ে প্রাচীন কথক-স্থপতিরা হয়তো মানুষের বুদ্ধি ও সিংহের বিক্রমের মিশ্রণ তৈরি করতে চেয়েছিলেন।

খ্রিস্টপূর্ব নবম শতাব্দীতে স্ফিংস চিত্রশিল্পী এবং ভাস্করশিল্পীদের কাছে প্রেমের প্রতীক হিসেবে ধরা দেয়। গ্রিক ও মিসরীয় পৌরাণিক কাহিনীতে ভিন্ন ভিন্ন স্ফিংসের উল্লেখ পাওয়া যায়। গ্রিকরা অবশ্য স্ফিংসের দেহে নারীর সৌষ্ঠব প্রয়োগ করেছিলেন। গ্রিসে স্ফিংসের পরিচয় ধ্বংস ও দুর্ভাগ্যের বাহক এক দানবী হিসেবে। পৃথিবীর বৃহত্তম স্ফিংস ভাস্কর্যটির নির্মাতা মনে করা হয় রাজা ফারাও খাফরাকে। রাজা ফারাও খাফরা তার রাজবংশের চতুর্থ রাজা ছিলেন (২৭২৩-২৫৬৩ BC)। এ স্ফিংস ভাস্কর্যকে বলা হয় Khepri-Re-Atum, আরবি নাম Abual Hoi, যা অনুবাদ করলে হয় 'ফাদার অব টেরর' (Father of terror)। তবে গ্রিক নাম স্ফিংসই প্রাচীন নিদর্শন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। তবে গ্রিক পুরাণের স্ফিংস এবং মিসরীয় স্ফিংসের মধ্যে পার্থক্যের কথা না বললেই নয়। মিসরে স্ফিংসকে মানব হিসেবে দেখালেও গ্রিক পুরাণে এটা মানবী। গ্রিক কবি হেসিউডের বর্ণনা থেকে জানা যায়, এই স্ফিংস হচ্ছেন ইচিদনা এবং অথ্রুসের কন্যা। আর অন্য মতে তাইফুন এবং ইচিদনার কন্যা। এখানেও একে ভয়ঙ্কর দানবী হিসেবেই পরিচিত করা হয়েছে।

যত যাই হোক না কেন, কল্পনা কিংবা পুরাণের এই দানবী আজো শত শত মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন