রানী হিপ্পোলিটা যথা সময়ে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম দিলেন। সেই পুত্র সন্তানের নাম রাখা হল হিপপোলিটাস। রাজার মোহভঙ্গ হল। রাজা হিপ্পোলিটা কে বললেন, ‘এবার তুমি নরকে যাও।’ হিপ্পোলিটা মনে আঘাত পেলেন। ফিরে গেলেন এশিয়া মাইনরে এ্যামাজনদের রাজ্যে ।
এখানেই শেষ নয়।
রাজা থেসিয়াস বিয়ে করলেন ফেড্রাকে। কে ফেড্রা ? ফেড্রা ছিলেন ক্রিট দ্বীপের রাজা মিনোস এর কন্যা। এই মিনোসের নামেই ক্রিট দ্বীপের সভ্যতাকে বলা হয় মিনিয় সভ্যতা। যাক হোক। ঘটনা মোড় নিল অন্যদিকে। হিপপোলিটাস তখন কিশোর। কিশোর হিপপোলিটাস এর প্রেমে পড়লেন ফেড্রা । (উপকথা কেন এত লোকপ্রিয় তা নিশ্চয়ই বোঝা যাচ্ছে!) হিপপোলিটাস -ফেড্রার ভালোবাসা নিয়ে গ্রিক নাট্যকার ইউরিপিদেস নাটক লিখেছেন । দু-বার সে নাটক মঞ্চস্থ করেছেন এথেন্সের নাট্যশালায়। এমন কী শেকসপীয়ারের ‘আ মিডসামার নাইটস ড্রিম’ নাটকে আমরা রাজা থেসিয়াস আর রানী হিপ্পোলিটা দেখতে পাই।
গ্রিক ঐতিহাসিক হিরোডোটাস যাদের ‘পুরুষ খুনি’ বলেছেন, তারা আসলে কারা? গ্রিক উপকথার সেই ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধারা আসলে কারা? তারা কি সম্পূর্নতই উপকথারজাত? না, তাদের বাস্তবিক কোনও অস্তিত্ব ছিল?
বর্তমানকালের ঐতিহাসিকগন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেস্টা করেছেন। এশিয়া মাইনরে অবস্থিত কৃষ্ণসাগরের আশেপাশে গড়ে উঠেছিল সাইদিয় সভ্যতা। ৮০০ খ্রিস্টপূর্বে এদের অবস্থান সম্পর্কে গ্রিকরা সচেতন হয়। Scythians দের বাংলায় বলা হয় শক।
গ্রিক উপকথার সেই ‘এ্যামাজন’ নারী যোদ্ধারা আসলে শক নারী!
শক সভ্যতায় যে সক্রিয় নারীযোদ্ধা ছিল, তার প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমান মিলেছে। শকদের সভ্যতার কেন্দ্র ছিল বর্তমানকালের ক্রিমিয়া। শক সমাধিক্ষেত্রে খনন কার্য চালিয়ে সশস্ত্র নারীর অস্তিত্ব মিলেছে। দেখেশুনে মনে হয় শকদের সৈন্যবাহিনীতে অন্তত ২৫% নারী যোদ্ধা ছিল। আর সেসব শক নারী যোদ্ধাদের ধনুকসহ সমাধিস্থ করা হত।
ক্রিমিয়ার অন্ঞ্চল; ৮০০ খ্রিস্টপূর্বে এখানেই উদ্ভব হয়েছিল সাইদিয় বা শক সভ্যতার। যাদের নারীযোদ্ধা ছিল। এদেরই গ্রিকরা নানা ভাবে বনর্না করেছে। যাদের কথা ইউরিপিদেস থেকে শেকসপীয়ার অবধি রচনায় উল্লেখ করেছেন।
কিন্তু কেন শকরা নারীরা যুদ্ধবিদ্যাকে অত সিরিয়াসলি গ্রহন করেছিল?
রুশ প্রত্নতাত্ত্বিক ভেরা কোভালেভস্কায়া এর উত্তর দিয়েছেন। কোভালেভস্কায়া মনে করেন শক পুরুষরা যুদ্ধ কিংবা শিকারের জন্য দূরবর্তী স্থানে দীর্ঘ সময় ধরে অবস্থান করত। যে কারণে যাযাবর শক নারীরা তাদের পশু ও চারণভূমি প্রতিরক্ষার্থে হাতে যুদ্ধাস্ত্র তুলে নেয়। সে সময়টায়, অর্থাৎ খ্রিস্টপূর্ব ৮০০ শতকের দিকে শকরা এশিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। ভেরা কোভালেভস্কায়া গবেষনা করে দেখেছেন এই প্রক্রিয়ায় একাধারে ২৮ বছর অবধি শক নারীদের একা পুরুষবিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হত!
পুরুষশূন্য সেই সব শক নারীদের বিরুদ্ধে বিচ্ছিরি সব কল্পকাহিনী ছড়িয়েছে গ্রিস। (এখনও বাংলাদেশি সমাজে নারী একা থাকলে কত কথা ওঠে!) শকদের পুরুষবিহীন সমাজটি গ্রিকদের নারীরাজ্য মনে হতেই পারে। আর নারীদের নিয়ে মুখরোচক আলোচনার তো শেষ নেই। ‘এ্যামাজন’ বালিকাদের তীরধনুক ছোঁড়া শিখতে হত। ধনুক বাঁকাতে বুকে ডান দিকে চাপ পড়ে; যে কারণে বালিকার ডান স্তনটি তার মা পুড়িয়ে ফেলত। গ্রিক ভাষায় স্তনশূন্যতাকে বলে: এ্যামাজন। ইত্যাদি …ইত্যাদি …
পরিবারের প্রধান পুরুষ জীবিকার তাগিদে দীর্ঘকাল অনুপস্থিত থাকলে সেই পরিবারের বিপদশঙ্কুল পরিবেশে আত্মরক্ষার অধিকার তো আছে …কি বলেন …
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন