কিভাবে পৃথিবী, আকাশ,গাছপালা, সমুদ্র, গ্রহ, নক্ষত্র ইত্যাদি এল
সে রহস্যের আজও উত্তর নেই। এখনকার মত আদিমযুগেও
সৃস্টি নিয়ে ভেবেছে মানুষ। খৃস্টপূর্ব প্রাচীন গ্রীস
দেশে সৃস্টি সম্পর্কে বেশ কিছু পৌরানিক ঊপাখ্যান ছিল। তার
একটা হল -
সৃস্টির শুরুতে পৃথিবী ছিল না,সমুদ্র ছিল না, আকাশ ছিল না , ছিল
শুধু অসীম অনন্ত শুন্যতা, বিশৃংখল নিরাকার অন্ধকার। সৃস্টির জন্য
প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই ছিল কিন্তু তার কোন গুনাবলি ছিল না,
পৃথিবীর আকার ছিল না ,পানির তরলতা ছিল না আকাশে আলো ছিল না।সমস্ত পদার্থের বিপরীতধর্মী জিনিস ছিল । গরম যেমন ছিল তেমনি ছিল ঠান্ডা, ভেজার সাথে শুকনা, ভারীর সাথে পাতলা ইত্যাদি।
একটা মাত্র পাখি ছিল, নাম তার নিক্স( Nyx)। কালো ডানার
পাখি নিক্স সোনালী ডিম পেড়ে যুগের পর যুগ তাতে "তা" দেওয়ার
পর একদিন প্রানের লক্ষন দেখা গেল এবং আরো কিছুদিনপর ডিম
ফেটে জন্ম নিলেন ভালবাসার দেবতা এরোস (Eros) । ডিমের
খোসার এক অংশ বাতাসের উপরে উঠে গিয়ে হল আকাশ আর অপর
অংশ হল পৃথিবী। এরোস আকাশের নাম রাখলেন ইউরেনাস
(Uranus) আর পৃথিবীর নাম রাখলেন “গাইয়া(Gaia), তারপর
এরোস, গাইয়া এবং ইউরেনাসের মনে ভালবাসা সঞ্চার করলেন।
গাইয়া এবং ইউরেনাসের অনেক সন্তান সন্ততি হল, নাতিপুতি হল।
এদের মধ্যে একজন ছিলেন ক্রোনাস (Kronus)। ক্রোনাস তার
সন্তানদের কেউ হয়ত তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর হয়ে যাবে এই
ভয়ে জন্ম মাত্রই তাদের গিলে খেয়ে ফেলতে লাগলেন। কিন্তু
ক্রোনাস স্ত্রী রিয়া(Rhea) তাদের সবচে ছোট
সন্তানকে লুকিয়ে রাখলেন। যখন ক্রোনাস সন্তান চাইলেন
তিনি কম্বলে জড়ানো এক টুকরো পাথর দিলেন আর ক্রোনাস তাই
গলাধঃকরন করলেন। এই সন্তান হলেন জিউস (Zeus )। জিউস যখন বড় হলেন তখন
বাবার হাত থেকে তার ভাই বোনদের
কৌশলে রক্ষা করতে থাকলেন। তারপর জিউসে্র নেতৃত্বে পিতার
বিরুদ্ধে তারা অনেক বছর যুদ্ধ করে জয়ী হলেন।
তারা আকাশকে গ্রহ নক্ষত্র দিয়ে সাঁজালেন আর
পৃথিবীতে সাঁজালেন প্রানী দিয়ে। এরপর জিউস তার দুই পুত্র
প্রমিথিউস Prometheus (fore-thought) এবং এপিমেথিউস
Epimetheus (after-thought) এই দুজনকে পৃথিবীতে পাঠালেন
মানূষ এবং অনান্য
প্রানী তৈরী করে প্রত্যেককে একটা করে উপহার দিতে।
প্রমিথিউস দেবতাদের অনুকরনে সৃস্টি করলেন মানুষ
এবং এপিমিথিউস সৃস্টি করলেন অনান্য প্রানী। এপিমিথিউস
অনেক আগেই প্রানী সৃস্টি করে প্রত্যককে উপহার দিলেন। মানুষ
সৃস্টি শেষ হলে প্রমিথিউস যখন তাদের উপহার দেওয়ার জন্য
এলেন এপিমিথিউস তাকে লজ্জিতমূখে জানালেন আর কোন
উপহার অবশিস্ট নেই, সবই দিয়ে ফেলেছেন প্রানীদের। তখন বিষন্ন
প্রমিথিউস ঠিক করলেন মানুষকে তিনি আগুন উপহার দেবেন।
পরদিন সকালে সূর্য্য আকাশে ওঠার পর তিনি সেখান থেকে আগুন
চূরি করে এনে মানূষদের কে আগুনের ব্যাবহার শেখালেন। আগুনের
উপর দেবতা ছাড়া অন্য কারো ব্যবহার করার অধিকার ছিল না।
জিউস প্রমিথুসের এই কাজ জানতে পেরে তাকে শাস্তি স্বরুপ এক
পাহাড়ের সাথে বেধে রাখলেন। অনন্ত কাল ধরে প্রতিদিন
শকুনে এসে তার লিভারের কিছু অংশ খেয়ে যায়। জিউসের অপর এক সন্তান তৈরী করলেন অপূর্ব সুন্দরী রমনী, নাম
তার প্যান্ডোরা( Pandora), সমস্ত
দেবতারা প্যান্ডোরাকে উপহার দিলেন। জিউস উপহার দিলেন
কৌতুহল এবং একটা বাক্স। তিনি কিন্তু প্যান্ডোরা কে নিষেধ
করে দিলেন কখনই সে বাক্স না খুলতে। তারপর প্যান্ডোরার সাথে এপিমিথিউসের বিয়ে হল।তারা সুখেই দিন
কাটাচ্ছিলেন । প্যান্ডোরার মনে সব সময় সেই বাক্স খুলে দেখার
কৌতুহল। কি আছে সে বাক্সে? একদিন এপিমিথিউস যখন
বাইরে গেলেন প্যান্ডোরা খুললেন সে বাক্স আর মূহুর্তেই
বেরিয়ে এল ভয়ঙ্কর খারাপ সব জিনিস যেমন ব্যাথা বেদনা, রোগ
শোক, লোভ লালসা। প্যান্ডোরার চিৎকার শুনে এপিমিথিউস
তাড়াতাড়ি ফিরে এসে বন্ধ করলেন সে বাক্সের ঢাকনা। কিন্তু যা হওয়ার তা হয়ে গেছে, বেরিয়ে গেছে মানুষের কস্টের
সমস্ত উপকরন। সেদিন রাতে তারা শুনতে পেলেন বাক্সের ভেতর
থেকে এক ক্ষীন কন্ঠ। “ কে ওখানে? জিজ্ঞেস করলেন তারা ।
বাক্সের ভেতর থেকে উত্তর এল “আমি আশা , আমাকে মুক্ত
করে দাও । তারা ঢাকনা খুললেন বেরিয়ে উড়ে গেলেন আশার দেবী।
আশা নিয়েই মানূষ বেচে আছে আর ইহ জীবনে ভোগ করে দুখঃ,
বেদনা ,রোগ, শোক ইত্যাদি।
লিখেছেনঃ খন্দকার তৌকীর আহমেদ,দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ।
সে রহস্যের আজও উত্তর নেই। এখনকার মত আদিমযুগেও
সৃস্টি নিয়ে ভেবেছে মানুষ। খৃস্টপূর্ব প্রাচীন গ্রীস
দেশে সৃস্টি সম্পর্কে বেশ কিছু পৌরানিক ঊপাখ্যান ছিল। তার
একটা হল -
সৃস্টির শুরুতে পৃথিবী ছিল না,সমুদ্র ছিল না, আকাশ ছিল না , ছিল
শুধু অসীম অনন্ত শুন্যতা, বিশৃংখল নিরাকার অন্ধকার। সৃস্টির জন্য
প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছুই ছিল কিন্তু তার কোন গুনাবলি ছিল না,
পৃথিবীর আকার ছিল না ,পানির তরলতা ছিল না আকাশে আলো ছিল না।সমস্ত পদার্থের বিপরীতধর্মী জিনিস ছিল । গরম যেমন ছিল তেমনি ছিল ঠান্ডা, ভেজার সাথে শুকনা, ভারীর সাথে পাতলা ইত্যাদি।
একটা মাত্র পাখি ছিল, নাম তার নিক্স( Nyx)। কালো ডানার
পাখি নিক্স সোনালী ডিম পেড়ে যুগের পর যুগ তাতে "তা" দেওয়ার
পর একদিন প্রানের লক্ষন দেখা গেল এবং আরো কিছুদিনপর ডিম
ফেটে জন্ম নিলেন ভালবাসার দেবতা এরোস (Eros) । ডিমের
খোসার এক অংশ বাতাসের উপরে উঠে গিয়ে হল আকাশ আর অপর
অংশ হল পৃথিবী। এরোস আকাশের নাম রাখলেন ইউরেনাস
(Uranus) আর পৃথিবীর নাম রাখলেন “গাইয়া(Gaia), তারপর
এরোস, গাইয়া এবং ইউরেনাসের মনে ভালবাসা সঞ্চার করলেন।
গাইয়া এবং ইউরেনাসের অনেক সন্তান সন্ততি হল, নাতিপুতি হল।
এদের মধ্যে একজন ছিলেন ক্রোনাস (Kronus)। ক্রোনাস তার
সন্তানদের কেউ হয়ত তার চেয়ে শ্রেষ্ঠতর হয়ে যাবে এই
ভয়ে জন্ম মাত্রই তাদের গিলে খেয়ে ফেলতে লাগলেন। কিন্তু
ক্রোনাস স্ত্রী রিয়া(Rhea) তাদের সবচে ছোট
সন্তানকে লুকিয়ে রাখলেন। যখন ক্রোনাস সন্তান চাইলেন
তিনি কম্বলে জড়ানো এক টুকরো পাথর দিলেন আর ক্রোনাস তাই
গলাধঃকরন করলেন। এই সন্তান হলেন জিউস (Zeus )। জিউস যখন বড় হলেন তখন
বাবার হাত থেকে তার ভাই বোনদের
কৌশলে রক্ষা করতে থাকলেন। তারপর জিউসে্র নেতৃত্বে পিতার
বিরুদ্ধে তারা অনেক বছর যুদ্ধ করে জয়ী হলেন।
তারা আকাশকে গ্রহ নক্ষত্র দিয়ে সাঁজালেন আর
পৃথিবীতে সাঁজালেন প্রানী দিয়ে। এরপর জিউস তার দুই পুত্র
প্রমিথিউস Prometheus (fore-thought) এবং এপিমেথিউস
Epimetheus (after-thought) এই দুজনকে পৃথিবীতে পাঠালেন
মানূষ এবং অনান্য
প্রানী তৈরী করে প্রত্যেককে একটা করে উপহার দিতে।
প্রমিথিউস দেবতাদের অনুকরনে সৃস্টি করলেন মানুষ
এবং এপিমিথিউস সৃস্টি করলেন অনান্য প্রানী। এপিমিথিউস
অনেক আগেই প্রানী সৃস্টি করে প্রত্যককে উপহার দিলেন। মানুষ
সৃস্টি শেষ হলে প্রমিথিউস যখন তাদের উপহার দেওয়ার জন্য
এলেন এপিমিথিউস তাকে লজ্জিতমূখে জানালেন আর কোন
উপহার অবশিস্ট নেই, সবই দিয়ে ফেলেছেন প্রানীদের। তখন বিষন্ন
প্রমিথিউস ঠিক করলেন মানুষকে তিনি আগুন উপহার দেবেন।
পরদিন সকালে সূর্য্য আকাশে ওঠার পর তিনি সেখান থেকে আগুন
চূরি করে এনে মানূষদের কে আগুনের ব্যাবহার শেখালেন। আগুনের
উপর দেবতা ছাড়া অন্য কারো ব্যবহার করার অধিকার ছিল না।
জিউস প্রমিথুসের এই কাজ জানতে পেরে তাকে শাস্তি স্বরুপ এক
পাহাড়ের সাথে বেধে রাখলেন। অনন্ত কাল ধরে প্রতিদিন
শকুনে এসে তার লিভারের কিছু অংশ খেয়ে যায়। জিউসের অপর এক সন্তান তৈরী করলেন অপূর্ব সুন্দরী রমনী, নাম
তার প্যান্ডোরা( Pandora), সমস্ত
দেবতারা প্যান্ডোরাকে উপহার দিলেন। জিউস উপহার দিলেন
কৌতুহল এবং একটা বাক্স। তিনি কিন্তু প্যান্ডোরা কে নিষেধ
করে দিলেন কখনই সে বাক্স না খুলতে। তারপর প্যান্ডোরার সাথে এপিমিথিউসের বিয়ে হল।তারা সুখেই দিন
কাটাচ্ছিলেন । প্যান্ডোরার মনে সব সময় সেই বাক্স খুলে দেখার
কৌতুহল। কি আছে সে বাক্সে? একদিন এপিমিথিউস যখন
বাইরে গেলেন প্যান্ডোরা খুললেন সে বাক্স আর মূহুর্তেই
বেরিয়ে এল ভয়ঙ্কর খারাপ সব জিনিস যেমন ব্যাথা বেদনা, রোগ
শোক, লোভ লালসা। প্যান্ডোরার চিৎকার শুনে এপিমিথিউস
তাড়াতাড়ি ফিরে এসে বন্ধ করলেন সে বাক্সের ঢাকনা। কিন্তু যা হওয়ার তা হয়ে গেছে, বেরিয়ে গেছে মানুষের কস্টের
সমস্ত উপকরন। সেদিন রাতে তারা শুনতে পেলেন বাক্সের ভেতর
থেকে এক ক্ষীন কন্ঠ। “ কে ওখানে? জিজ্ঞেস করলেন তারা ।
বাক্সের ভেতর থেকে উত্তর এল “আমি আশা , আমাকে মুক্ত
করে দাও । তারা ঢাকনা খুললেন বেরিয়ে উড়ে গেলেন আশার দেবী।
আশা নিয়েই মানূষ বেচে আছে আর ইহ জীবনে ভোগ করে দুখঃ,
বেদনা ,রোগ, শোক ইত্যাদি।
লিখেছেনঃ খন্দকার তৌকীর আহমেদ,দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন